ইউনিকোড ফন্ট কি এবং কেন আমরা সবসময় সেগুলি ব্যবহার করব?
বন্ধুরা বর্তমান সময়ে আপনারা হয়তো দেখেছেন যে বাংলা ইউনিকোড ফন্টের ব্যবহার
আগের তুলনায় অনেকটাই বেড়ে গেছে।যারা এই প্রফেসনে আছে অর্থাৎ প্রিন্ট মিডিয়ার সাথে
যুক্ত তাদের কাছে ইউনিকোড ফন্ট এখন একটি অতি আবশ্যকীয় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।এই
ফন্টের ব্যবহারে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে সাহায্য করেছে। আজ
আমরা এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। কেন আপনি ইউনিকোড ব্যবহার করবেন আর ব্যবহার
করলে আপনি কি কি সুবিধা পাবেন সবটাই জানতে পারবেন।
1. ভারতবর্ষের মতো জনবহুল দেশে এখন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা
অনেক।কম্পিউটার থেকে মোবাইল সব ক্ষেত্রেই ইন্টারনেটের ব্যবহার।ইন্টারনেটের
সাহায্য ছাড়া জীবন এখন ভাবাই যায় না। আপনারা যারা পড়ছেন তারা জানেন যে বাংলাতে
যেমন ইউনিকোড ফন্ট আছে তেমনি পৃথিবীর সমস্ত ভাষাতেই কিন্তু ইউনিকোড ফন্ট আছে।যদি
আমরা একটু পিছিয়ে যাই আমরা তখন বাংলা টাইপের জন্য ব্যবহার করতাম টপটাইপ এবং সেটাও
যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিল।তারপর একে একে অনেক সফটওয়্যার এসেছে বাংলা টাইপের জন্য।বর্তমানে
এসটিএম, পারফেক্ট
টাইপিস্ট, বিজয়, শ্রীলিপি
প্রভৃতি জনপ্রিয় বাংলা টাইপিং সফটওয়্যার।এদের মধ্যে বেশিরভাগই পেড সফটওয়্যার।আগে
এদের মধ্যে কারোরই ইউনিকোড সাপোর্ট ছিল না। বর্তমানে তারা এই সাপোর্ট দিচ্ছে
কিন্তু তার জন্য তারা অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে।
এই ইউনিকোডের সাহায্যে আমরা ওয়েবসাইট থেকে শুরু করে মোবাইলে পর্যন্ত বাংলা টাইপ করতে পারছি।প্রাত্যহিক যে কাজগুলো আমরা পিসি বা ল্যাপটপে করে থাকি সেখানেও ইউনিকোড ব্যবহার করছি। আগে যখন ইউনিকোড ছিল না আমরা কোনোভাবেই কিন্তু ওয়েবসাইট বা মোবাইলে বাংলা লিখতে পারতাম না। এখন যেমন যদি গুগুলে কোন বিষয়ে সার্চ করতে হয় আমরা অনায়াসেই বাংলা লিখে তার সার্চ দিতে পারি আমাদের ইংরাজীতে লেখার দরকার পড়ে না। বিভিন্ন ওয়েব সাইট আছে যেগুলো বাংলাতেই তৈরি আমরা তার মধ্যে ঢুকে বাংলা লেখা পড়তে পারছি এবং সেগুলো কপি করে আমরা আমাদের এপ্লিকেশনে পেস্ট করতে পারছি এবং এডিটও করতে পারছি কোনোরকম কোনো অসুবিধা নেই। প্রতিটা নিউজ চ্যানেলগুলো তাদের একটা অনলাইন ভার্সান করেছে বহুদিন আগে থেকেই। সেখানে সমস্ত লেখা তো বাংলা ইউনিকোডেই।বর্তমান টেকনোলজির সাথে তাই ইউনিকোড নিজেকে পুরোপুরো খাপ খাইয়ে নিয়েছে।অন্য বাংলা্ ANSI ফন্টগুলো তাই আস্তে আস্তে পিছিয়ে পড়ছে। টেকনোলজির সাথে থাকতে হলে, ইন্টারনেট, ওয়েবসাইট, স্মার্টফোন ব্যবহার করলে ইউনিকোডের দরকার পড়বেই।
2. বর্তমানে সোস্যাল মিডিয়া আমাদের জীবনে অনেকটাই জড়িয়ে আছে।এখন তো নিউজ
চ্যানেলের আগেই সোস্যাল মিডিয়ায় খবর আগে পৌঁছে যায়।আর এই সোস্যাল মিডিয়ায় কোনো
নিউজ পোস্ট করার জন্য সেই ইউনিকোড।অবশ্য যদি বাংলা বা আঞ্চলিক ভাষাতে লিখতে হয়।প্রতিটা সোস্যাল মিডিয়ায় সরাসরি বাংলা লেখার জন্য
কিন্তু ইউনিকোডেরই ব্যবহার হয়। প্রতিদিন কত পোস্ট আমরা দেখি তাহলে বুঝতে পারছেন
ইউনিকোডের ব্যবহার সোস্যাল মিডিয়ায় কতখানি।
এছাড়া প্রতিটা এপ্লিকেশনে এর সাপোর্ট থাকে। যে এপ্লিকেশনে ভার্সান আপডেট আসছে
সেখানেও ইউনিকোড সাপোর্ট সহ আসছে। তাই এখন ইউনিকোডের উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করা
যায়।আগামীদিনগুলো হয়তো ইউনিকোডেরই হতে চলেছে।
3. বাংলা টাইপের জন্য যে সমস্ত সফটওয়্যারগুলো আছে তার মধ্যে বেশিরভাগই পেড সফটওয়্যার।তারা যে শুধুমাত্র কেনার সময় অনেক টাকা চার্জ করে তা নয় পরবর্তীকালে কোনোরকম সমস্যা হলে তার জন্যও অনেক টাকা খরচ করতে হয়। মানে এটাই দাঁড়াল যে, আপনি কিনলেও সেটা আপনার নয়। কোম্পানীর ওপরে নির্ভর করে থাকতে হয়। কোম্পানীগুলো একটা লক তৈরি করে যাতে শুধুমাত্র একটি কম্পিউটারে সেটা ব্যবহার করতে পারে তার জন্য।
কিন্তু এখন উইনডোজ 7 থেকে শুরু করে উইনডোজ 10, 11 সব
অপারেটিং সিস্টেমে বাংলা ইউনিকোড বাই ডিফল্ট হিসাবে থাকে। তার জন্য কোনোরকম কোনো
টাকা অতিরিক্ত দিতে হয় না। সমস্ত রকম সাপোর্ট তারা দিচ্ছে। আপনি একটি কম্পিউটারে
ব্যবহার করুন বা একাধিক কোনো সমস্যা নেই। আপনি স্বাধীন ভাবে সব কাজ করতে পারবেন
কারোর উপর নির্ভর করে থাকতে হবে না। উইনডোজ ইন্সটলের সাথে বাংলা ইউনিকোড ফন্টও
ইন্সটল হয়।আলাদা করে বাংলা ফন্ট ইন্সটল না করলেও ডিফল্ট ফন্ট দিয়ে কাজ চালাতে
পারবেন।
4. এই ফন্টের একটি বড়ো সুবিধা হল যে, সবাই যে যেখানেই থাকুক না কেন বা যে ডিভাইস
ব্যবহার করুক না কেন সে এই লেখা পড়তে পারবে।ধরুন আপনি ওয়েবসাইটে আছেন বা মোবাইল
ব্যবহার করছেন সেখানে যদি আপনি বাংলা পড়তে পারেন আপনাকে সেই লেখা ট্রান্সালেট করার
দরকার পড়বে না আপনি সহজেই লেখা পড়তে পারবেন।এবার ধরুন আপনি বাংলা জানেন না কিন্তু
লেখার বিষয়বস্তু আপনার দরকার তাহলে সহজেই বাংলা লেখা কপি করে
ইংরাজীতে ট্রান্সলেট করতে পারবেন সহজেই।তার মানে এই দাঁড়াল যে, আপনার বাংলা
লেখা যে কোনো ভাষাতেই ট্রান্সালেট করা যায়।যদি বাংলা লেখা কোনো ফাইল কাউকে
সেন্ড করেন তাহলে সেই লেখা কখনো পরিবর্তন হবে না হতে পারে যে ফন্ট চেঞ্জ হবে
কিন্তু বাংলা লেখা বাংলাই থাকবে।
5. আমরা যদি এই ফন্ট আমাদের প্রিন্ট মিডিয়ায় ব্যবহার করি (এখন অনেকক্ষেত্রে এএনএসআই ব্যবহার
হয়) তাহলে আমাদের ওয়েব ভার্সানের জন্য আলাদা করে
ফন্ট কনভার্টের দরকার পড়বে না। অনেক সময় আমরা পুরাতন ফন্টে কাজ করে থাকি যেটা ওয়েব
সাইটে সাপোর্ট করে না। তারপর সেটা পিডিএফ কনভার্ট করে ওয়েবসাইট বা অন্যান্য
প্লাটফর্মে আপলোড করা হয়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া
যাবে। অর্থাৎ আমরা সরাসরি ওয়েবসাইটে বা অন্যান্য জায়গায় আমরা্ এই ফন্টের লেখা
আর্টিকেল আপলোড করতে পারব।সবচেয়ে বড় কথা, যদি কোনো লেখা এডিট করার দরকার পড়ে তাহলে
কয়েক সেকেন্ডর মধ্যে আমরা করতে পারব কিন্তু পিডিএফ থাকলে তা অনেকটাই দেরি হয়ে যায়।
6. কোনোরকম কোনো কনভার্টারের দরকার পড়ে না।এর অরিজিন্যাল লেখাই সরাসরি যে
কোনো জায়গায় আপলোড করতে পারবেন।অপরদিকে যদি বাংলা লেখার একটা ইংরাজী ভার্সান
চান তাহলে গুগুলে ইংলিশ টু বেঙ্গলি ট্রান্সলেট এ গিয়ে পেস্ট করলেই সমস্ত লেখার
সুন্দর ইংরাজী ভার্সান পাবেন।
7. ইউনিকোড লেখার যদি টেক্সট ভার্সান না থেকে ইমেজ থাকে এবং মোটামুটি ভালো
অবস্থায় থাকে তাহলে সেটা সহজেই ইমেজ টু টেক্সট কনভার্ট করা যায়।গুগুল ডকস বা
গুগুলে অনেক ওয়েবসাইটে এটা করা যায়।
8. বাংলা ফন্টের চাহিদা আগেও ছিল এখনও আছে।আগে বাংলা ফন্ট অনেক কম ছিল কিন্তু এখন
প্রচুর ফ্রি ফন্ট পাওয়া যায়। প্রতিদিন নতুন নতুন ফন্ট আমরা দেখতে পাচ্ছি। বিভিন্ন
ওয়েবসাইট ফ্রি ফন্টের সুবিধা দিচ্ছে।
যারা এই ফন্টগুলো তৈরি করছে তারা অবশ্যই এর একটা ইউনিকোড ভার্সান
রাখছে।ইউনিকোড মাস্ট।তাই বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে আপনারা প্রচুর ফ্রি বাংলা
ইউনিকোড ফন্ট কালেকশন করতে পারেন। কোনোরকম কোনো চার্জ না দিয়ে। তবে কিছু
প্রিমিয়াম ফন্টও থাকে যেগুলোর জন্য সামান্য চার্জ তারা করে আপনি ইচ্ছে করলে
সেগুলো কিনতেও পারেন। একটু ওয়েবসাইটে সার্চ করলে প্রচুর ফ্রি ইউনিকোড ফন্ট
আপনারা পাবেন। লিপিঘর ও বিজয় এমন দুটি সাইট যেখানে আপনারা সুন্দর সুন্দর ইউনিকোড
ফন্ট পাবেন।তাই ফন্টের ব্যাপারে আপনাদের কোনোরকম কোন সমস্যা হবে না।
9. যদি আপনাদের ইউনিকোড ফন্টকে ANSI তে
কনভার্ট করার দরকার পরে তাহলে অনেক ওয়েব সাইট আছে যেখানে আপনারা ফ্রিতে কনভার্ট
করতে পারবেন। ইউনিকোড ফন্ট সহজেই কনভার্ট হয় এবং কনভার্ট হওয়ার পর সামান্য যদি
সমস্যা থাকে সেগুলো সহজেই এডিট করা যায়।
10. সারা বিশ্বের সমস্ত ভাষাতেই এখন ইউনিকোড সাপোর্ট আছে।আপনাকে শুধু আপনার ল্যাঙ্গুয়েজ সিলেক্ট করে ইউনিকোড অ্যাক্টিভেট করতে হবে।তারপর আপনি
সহজেই আপনার ভাষাতে ইউনিকোডে লিখতে পারবেন।
11. উইনডোজ এর সাথে বাংলা ইউনিকোডের যে ডিফল্ট কি বোর্ড লে-আউট থাকে সেটা অতি প্রচলিত পুরনো বাংলা লে-আউট।
তাই বাংলা টাইপের জন্য আলাদা কোনো লে-আউট
শিখতে হয় না।খুব সামান্য কিছু চেঞ্জ যেটা সহজেই শিখে নেওয়া যায়।খুবই সহজ সরল লেআউট।গুগুলে খুজলে কী-লেআউটের ইমেজ সহজে পাবেন।যা দেখে নতুন
শিক্ষার্থীরা শিখতে পারবেন।
12. সমস্ত পেড বাংলা টাইপ সফটওয়্যার কোম্পানীগুলো এখন তাদের নতুন ভার্সানে
ইউনিকোড সাপোর্ট দিচ্ছে। তাই যারা আগে থেকেই পেড সফটওয়্যার কিনে রেখেছো তারা এই
সফটওয়্যারের মাধ্যমেই ইউনিকোডে বাংলা টাইপ করতে পারবে।
ইউনিকোড নিয়ে এই আলোচনা কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্টে লিখে জানাবে। ধন্যবাদ ভালো থাকবেন।
No comments